অসৎ রেস্টুরেন্ট মালিকদের শায়েস্তা করার উপায়!
একজন ভোজন রসিক মানুষ হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া হয়ে থাকে আমার। সুস্বাদু খাবারের আইটেমের পাশাপাশি তিক্ত অভিজ্ঞতাও অর্জন হয় অনেক সময়। কখনো মুরগীর ভেতরে রক্ত, কখনো বাসী অখাদ্য, কখনো খাবারের মানের চেয়ে দাম অসম্ভব রকমের বেশি, কখনো ওয়েইটার কিংবা ম্যানেজারের দুর্ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা আমাদেরকে পীড়া দিয়ে থাকে। তাছাড়া ভ্যাট কারচুপির বিষয়টি তো মোটামুটি সার্বজনীন। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম এসব সমস্যার তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান পেলে ভালো হতো। এই নোটটাতে চেষ্টা করলাম কিছু সমাধান বের করতে।
সঠিক উপায়ে অভিযোগ করে এবার আপনিও কামাবেন হাজার হাজার টাকা!
আইন অনুযায়ী, কোনো উৎপাদনকারি/সরবরাহকারী/বিক্রেতা নির্ধারিত মূল্যের চেযে অধিক মূল্যে কোনো পণ্য বা ঔষধ বিক্রি, ওজনে কারচুপি, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, পণ্যের মোড়কে খুচরা মূল্য ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না করলে এবং আইনের বাধ্যবাধকতা অমান্য করে দোকান বা প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করলে যে কোনো ক্রেতা ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’-এর বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। মজার ব্যাপার হলো, অভিযোগ প্রমাণিত হলে এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হলে, অভিযোগকারীকে আইনানুযায়ী জরিমানাকৃত অর্থের ২৫% প্রদান করা হবে। (তথ্যসুত্র)
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১ কারওয়ান বাজার(টিসিবি ভবন-৮ম তলা), ঢাকা-১২১৫ ফোন / ফ্যাক্স: ৮৮-০২-৮১৮৯৪২৫, ৮৮-০২-৮১৮৯০৪৫ অভিযোগ কেন্দ্রঃ ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ ই-মেইল: dncrp@yahoo.com (সাথে ক্যাশ মেমো এর ছবি / স্ক্রিনশট দিলে ভালো হয় ), ওয়েবসাইট: www.dncrp.gov.bdwww.dncrp.gov.bd *** অভিযোগ অবশ্যই "ক্যাশ মেমো " তে উল্লেখিত তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে । ***অভিযোগ এর সময় অবশ্যই ক্যাশ মেমো থাকতে হবে।
ভ্যাট কারচুপির বিরুদ্ধে অ্যাকশনঃ
কোনো রেস্টুরেন্ট যদি আপনার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে চায় সেক্ষেত্রে আপনিও যাচাই করার এখতিয়ার রাখেন যে তারা ভ্যাট আদায় করার বৈধতা রাখে কিনা এবং আপনি যে ভ্যাট দিচ্ছেন সেটা সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে কিনা। আপনার ভ্যাট প্রদানের বিপরীতে আপনাকে তারা একটা চালানপত্র দিতে বাধ্য থাকবে। যদি তারা সেটা না দেয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনি ০২-৯১৩২৫৬৪ নাম্বারে ফোন করে অভিযোগ করতে পারেন। এটা ‘কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট - দক্ষিন’-এর নাম্বার। আর যদি তারা আপনাকে চালানপত্র দেয়ও তারপরেও আপনি চেক করে নিতে পারেন যে তারা সেই ভ্যাট আদায়ের বৈধতা রাখে কিনা। এক্ষেত্রে গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে vat registration checker লিখে সার্চ দিয়ে অ্যাপটি ইন্সটল করতে হবে। সার্চ বক্সে দোকানের ভ্যাট রেজি. নম্বর লিখে সার্চ বাটনে চাপ দিতে হবে। BIN নম্বর আর ভ্যাট রেজি. নম্বর একই জিনিস। ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর আসল হলে পরের ডায়ালগ বক্সেই প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা দেখতে পাবেন। আর আনরেজিস্টার্ড হলে no result found লেখা দেখাবে। আর আনরেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই। আর সেই দোকানের ওই ভুয়া চালানপত্রসহ কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকার কাছে অভিযোগ করলেই তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। অ্যাপটি সরাসরি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট http://www.nbr.gov.bd/http://www.nbr.gov.bd/-এর ডাটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। সরকারি ডাটাবেজ যদি আপডেটেড থাকে তাহলে অ্যাপটিও সঠিক রেজাল্ট দেবে। এই দিক থেকে অ্যাপটি শতভাগ নির্ভরযোগ্য। (তথ্যসুত্র)
*** মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা ১৯৯১ এর বিধি ১৩ অনুযায়ী ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই বাধ্য থাকবে তাদের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বারটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে। এটি এমনভাবে রাখতে হয় যাতে সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। এই নাম্বারটি গোপন রাখা দন্ডনীয় অপরাধ।
একটি ভ্যাট চালানপত্র কীভাবে যাচাই করবেন?
সরকার ১ জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে মেট্রোপলিটান শহর ও জেলা শহরের হোটেল, রেস্তোরা, মিষ্টির দোকান, ফার্নিচারের শোরুম, বিউটি পার্লার, কমিউনিটি সেন্টার, শপিং মলের দোকান, সুপারশপ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর, জুয়েলার্সে ইসিআর মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। ইসিআর জেনারেটেড চালান প্রদান না করে নীল রংয়ের চালান দিলে এটিই প্রমাণ করে তারা ভ্যাট ফাকি দিচ্ছেন। ভ্যাট ফাকি দেয়া দন্ডনীয় অপরাধ। তাই এই ১১ ধরণের ব্যবসার ক্ষেত্রে নীল চালানকে না বলুন। এসব ক্ষেত্রে কেবল ইসিআর জেনারেটেড চালান গ্রহণ করুন।
একটি সঠিক ইসিআর জেনারেটেড ভ্যাট চালানে তিনটি তথ্য অবশ্যই থাকবে; ১. ব্যবসায়ীর ১১ ডিজিটবিশিষ্ট ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর (১০ ডিজিট হলে বুঝে নিবেন এটি ভুয়া); ২. চালানপত্র এর সিরিয়াল নম্বর, তারিখ, সময়( সিরিয়াল নম্বর না থাকার মানে দিনশেষে এই চালানের তথ্য মুছে ফেলা হবে); ৩. সরকার নির্ধারিত হারে ভ্যাটের পরিমাণ। এছাড়া ইসিআর মেশিনের নম্বরও থাকা দরকার।
ইসিআর জেনারেটেড চালানে উপরের বৈশিষ্ট্যগুলি না থাকলে আপনি যা করতে পারেন: (ক) ভ্যাট নিবন্ধনপত্র দেখতে চান; (খ) ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক প্রদত্ত ইসিআর মেশিন ব্যবহারের অনুমতিপত্র দেখতে চান এবং (গ) ইসিআর মেশিনে পূর্ববতী দিনগুলির বিক্রয়ের হিসেব আছে কিনা দেখতে চান।
একজন সৎ ব্যবসায়ী আপনাকে সব তথ্য জানাবে ও দেখাবে। আর অসৎ ব্যবসায়ী আপনার সাথে দূর্ব্যবহার করবে। এই দূর্জন ব্যবসায়ীকে সংঘবদ্ধভাবে রুখে দাড়ান অথবা সংশ্লিষ্ট ভ্যাট অফিসে অভিযোগ করুন।
*** ঢাকা মহানগর উত্তর-এ অবস্থিত সকলে এখানে ক্লিক করে Customs, Excise & VAT Commissionerate, Dhaka - North এর ফেইসবুক পেইজে অথবা commdkn@nbr.gov.bd অথবা commdkn@yahoo.com ঠিকানায় অভিযোগ জানাতে পারেন।
কোথায় অভিযোগ করবেন?
কোন সেলসম্যান মূসক চালান প্রদানে কোনরূপ অসহযোগিতা কিংবা দূর্ব্যবহার করলে সংশ্লিস্ট মূসক কমিশনারেটে ইমেইলে (বন্ধনীতে প্রদর্শিত) অথবা ফেসবুক পেজে অভিযোগ করবেন। ঢাকা পশ্চিমের মূসক নিবন্ধন নম্বর ১৭ (dhakawestcomm@yahoo.com), ঢাকা উত্তর ১৮(commdkn@nbr.gov.bd, commdkn@yahoo.com) ঢাকা দক্ষিণ ১৯ (cevdhksouth@yahoo.com), ঢাকা পূর্ব ২১ (vatdhakaeast@yahoo.com), রংপুর ১১ (rangpurvat@nbr.gov.bd), রাজশাহী ১২ (cevraj93@yahoo.com), যশোর ১৪(jessorecustoms@gmail.com), খুলনা ১৫ (khulnavathq@gmail.com), সিলেট ২২ (sylhetcustoms@yahoo.com), কুমিল্লা ২৩ (cevccomilla@nbr.gov.bd) এবং চট্টগ্রাম ২৪(ccevatctg@gmail.com) দিয়ে শুরু হয়েছে। মূসক নিবন্ধন নম্বরের প্রথম দুই ডিজিট দেখে বুঝে নিন প্রতিষ্ঠানটি কোন কমিশনারেটের অন্তভূর্ক্ত।